মুন্সিগঞ্জে লঞ্চে ২ তরুণীকে প্রকাশ্যে মারধর
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১০-০৫-২০২৫ ০১:০১:২৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১০-০৫-২০২৫ ০৩:০৫:২২ অপরাহ্ন
ছবি: সংগৃহীত
মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে যাত্রাবিরতি করা একটি যাত্রীবাহী লঞ্চে ‘পিকনিকে’ আসা দুই তরুণীকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় যাত্রীদের থেকে টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন লুটের অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, শুক্রবার (৯ মে) রাত ৮টার দিকে লঞ্চটি মুন্সিগঞ্জ ঘাটে নোঙর করে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভাঙচুরের খবর পেয়ে সেখানে যান তারা। পরে ভেতরে ঢুকে বেশ কিছু দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করেন এবং মারধরের শিকার তরুণীদের সাথে কথা বলেন।
ঘটনাস্থলে ছিলেন এমন একজন সাংবাদিক জানান, ঢাকা-লালমোহন রুটের লঞ্চটি প্রায় ৩০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। লঞ্চটির দ্বিতীয় তলার বেশ কয়েকটি কেবিনে ২০-২৫ কিশোর ও দুজন তরুণী ছিলেন। তারা ঢাকা থেকে ওই লঞ্চের কেবিন ভাড়া করেন। পরে সারাদিন পিকনিক করে আবার রাতে ঢাকায় ফিরছিলেন।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা রঙের পোশাক পরিহিত আনুমানিক ১৫-১৭ বছর বয়সী দুই তরুণীকে লঞ্চের একেবারে সামনের অংশে উঠিয়ে লাঠি দিয়ে বেপরোয়াভাবে পেটাচ্ছেন মুন্সিগঞ্জ শহরের নেহাল আহমেদ জিহাদ নামের এক যুবক। এ সময় অনেকে সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করে উল্লাস করছেন ও বিভিন্ন শ্লোগান দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিডিওতে মারধর করতে থাকা নেহাল আহমেদ জিহাদ বলেন, স্থানীয়রা তাদের আচরণ ও বেশভূষায় ক্ষিপ্ত হয়ে আক্রমণ করতে চলে আসে। আমি তাদের নিবৃত্ত করতে ‘ভাই’ হিসেবে শাসন করেছি। এটা আমার করা উচিত হয়নি।
তিনি বলেন, আবার আমি এটা না করলে মানুষজন তাদের জামাকাপড় টেনে খুলে ফেলতো। আরও বেশি হেনস্তা করতো। তাছাড়া স্থানীয়দের কাছ থেকে অন্তত ৮টি মোবাইল আমি তাদের উদ্ধার করে দিয়েছি। আমি মারধরের ঘটনায় অনুতপ্ত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া এ ঘটনার একাধিক ভিডিওতে আরও দেখা যায়, থেমে থাকা লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় উঠে গণহারে অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ যাত্রীদের পেটাচ্ছেন ১০-১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল। এসময় তারা লঞ্চের কেবিনগুলোতে তল্লাশি চালাচ্ছেন এবং দরজা ভাঙার চেষ্টা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৌভ্রমণে বের হয়ে আক্রমণের শিকার ‘এমভি ক্যাপ্টেন’ নামের লঞ্চটিতে পিকনিকের উদ্দেশ্যে আসা অন্তত ৬ যাত্রী মারধরে আহত হন। এর মধ্যে দুইজন অপ্রাপ্তবয়স্ক। তবে, তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তারা সবাই ঢাকার কামরাঙিরচর এলাকার বাসিন্দা।
এছাড়া লঞ্চটিতে অন্তত ৩০০ সাধারণ যাত্রী ছিলেন। তাদের সাথে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও স্থানীয়দের দেখে তারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, সন্ধ্যার নাস্তা কেনার জন্য ৮ থেকে ১০ জন যাত্রী লঞ্চ থেকে পল্টুনে নামে। সেখানে থাকা স্থানীয়রা মাদকসেবী সন্দেহ করে তাদের পিছু নিয়ে লঞ্চে উঠার চেষ্টা করলে লঞ্চের ম্যানেজার মো. শফিক তাদের প্রবেশে বাধা দেয়। এতে উত্তেজিত লোকজন জড়ো হয়ে লঞ্চে ঢুকে ভাঙচুর, লুট ও যাত্রীদের মারপিট করেন। পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজনা কমে আসে।
তরুণীদের প্রকাশ্যে মারধরের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফিরোজ কবির বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ঘটনাটি যেহেতু নদীতে ঘটেছে এ বিষয়ে নৌ পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে শুনেছি।
মুক্তারপুর নৌপুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ মো. আতাউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের সাথে আমরাও ছিলাম। মারধরের ঘটনার পর আমরা লঞ্চটিকে অনেকদূর পর্যন্ত পাহারা দিয়ে এগিয়ে দিয়ে আসি। ভুক্তভোগীরা পরবর্তীতে মারধর ও লুটের ঘটনায় অভিযোগ করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, তবে এখন পর্যন্ত (শনিবার সকাল) কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাংলা স্কুপ/প্রতিনিধি/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স